দেশে ইংলিশ শেখানোর জন্য অনেক প্রতিষ্ঠান অনলাইন কোর্স এবং বই থাকলেও দেশের অনেক মানুষ এখনও ইংলিশে বেশ দুর্বল। আর এই ইস্যুটিকে সলভ করতে ক্যাডেট কলেজগুলোর মতই নিবিড় পরিচর্যায় আবাসিক পরিবেশে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইংলিশ চর্চা চালিয়ে এ পর্যন্ত আড়াই হাজারেরও বেশি স্টুডেন্টকে ইংলিশে দক্ষ করে তুলেছে "ইংলিশ থেরাপি"। আমাদের আজকের ভিডিওতে আপনাদের জানাবো "ইংলিশ থেরাপি" কীভাবে তাঁদের ভিন্নধর্মী স্ট্র্যাটেজিতে মানুষের দুর্বলতাকে ওভারকাম করতে সহায়তা করছে।
আন্তর্জাতিক ভাষা হিসেবে আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় ইংলিশ শেখার প্রতি জোর দেওয়া হলেও দেশের অ্যাকাডেমিক কারিকুলাম এর অপর্যাপ্ততার কারণে বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই ইংরেজি ভাষায় দুর্বল হয়ে যায়। যার কারণে পরবর্তিতে তাদের গ্র্যাজুয়েশন, বিদেশে উচ্চ শিক্ষার পাশাপাশি চাকরি জীবনে নানারকম বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
"ইংলিশ থেরাপি" এর প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল ইসলামও পড়াশোনা শেষে একটি কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় বিষয়টির উপলব্ধি করেন। নিজের ইংরেজির প্রতি দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে তিনি বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কোর্স করেছেন। বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কোর্স করতে করতে এক সময় তিনি নিজেই ইন্সট্রাক্টর হিসেবে একটি স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। ইংলিশ এর ছাত্র থেকে শিক্ষক হয়ে ওঠার এই যাত্রায় তিনি এক সময়ে অনুভব করলেন যে কোনও ভাষা শেখার জন্য প্রয়োজন চর্চার। অথচ বেশিরভাগ কোচিং এর অফার করা কোর্সগুলো ছিল লেকচার ক্লাস ও Material নির্ভর, যেখানে শেখার পুরো বিষয়টিই আসলে স্টুডেন্ট এর পরিশ্রমের উপর নির্ভর করে। যার কারণে ক্লাসে যা পড়ানো হয় তা বেশিরভাগ সময়ই স্টুডেন্টরা বাসায় গিয়ে আর চর্চা করে না। ফলশ্রুতিতে তারা তাদের ইংলিশের দুর্বলতাও সঠিকভাবে কাটিয়ে উঠতে পারে না।
কোর্স করানোর পাশাপাশি তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতেও কয়েকটি ভিডিও দিলে তাঁর দক্ষতায় মুগ্ধ হয়ে অনেকেই তাঁর কাছে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে। সেখান থেকে প্রথাগত কোচিং গুলোতে যেভাবে পড়ানো হয়, তার বাইরে গিয়ে তিনি ইংলিশ শেখানোর জন্য চর্চা ভিত্তিক পরিবেশ তৈরি করার উদ্দেশ্যে ২০১৮ সালে ঢাকার মিরপুর এলাকায় যাত্রা শুরু করে ইংলিশ থেরাপি।
যাত্রার শুরু থেকেই প্রতিষ্ঠানটি ইংলিশ শেখানোর জন্য একটি পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করে আসছিলো। সাধারণত অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যেখানে দৈনিক এক ঘন্টার স্কুলের নিয়মমাফিক কাজ করিয়ে থাকে সেখানে সাইফুল ইসলাম সপ্তাহে ছয় দিন, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত শুধুমাত্র ইংলিশ পড়াবেন এমন পরিকল্পনা করেন। এই ধরনের পরিকল্পনার সাথে সামঞ্জস্য রেখে তিনি আবাসিক সিস্টেমও যুক্ত করেন, যাতে করে দেশের ডিপ্লোমা স্টুডেন্ট থেকে শুরু করে বিভিন্ন হাফিজিয়া ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী এবং বিদেশে যেতে ইচ্ছুক এমন শিক্ষার্থীরা, যারা ইংলিশে একেবারেই দুর্বল তাদেরকে ইলিশে Reading, Writing, Listening & Speaking এ দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা যায়।
যদিও ২০২০ সালে করোনার মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির ফিজিক্যাল কার্যক্রম বন্ধ করতে হয়। তখন প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল ইসলাম একাই টানা ৩৬৫ দিন রাতে ইংলিশ থেরাপি গ্রুপে পেইজ ও ইউটিউব চ্যানেলে ফ্রি লাইফ ক্লাস করান এবং নিয়মিত ভিডিও পাবলিশ করে গিয়েছেন। এই ভিডিও লেকচার গুলো প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব ও ফেসবুক পেজে অ্যাভেলেবেল আছে, যা দেশের লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী ফ্রিতেই অ্যাক্সেস করতে পারছে। এই ফ্রি ভিডিও দেখার পরে শিক্ষার্থীদের সাইফুল ইসলামের পড়ানোর ধরণ ভালো লেগে যায়।
দিনে দিনে স্টুডেন্ট সংখ্যা বাড়তে থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠানটির কাজের পরিধিও বাড়তে থাকে। ঢাকা ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলা ও প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগ্রহী শিক্ষার্থীদের সুবিধার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে ২০২২ সালে প্রতিষ্ঠানটি মিরপুর শেরেবাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামের এক নম্বর গেটের উল্টো পাশে একটি পাঁচতলা বিল্ডিং নিয়ে ইংলিশ থেরাপি অপারেশন বিস্তৃত করেন। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির ১১ টি আবাসিক হল রয়েছে, যেগুলোতে দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকা থেকে আসা ইংলিশে একেবারে দুর্বল শিক্ষার্থীরা বিনামূল্যেই থাকছে এবং তাদের ভাষা দক্ষতা ডেভেলপ করছে। ইংলিশ থেরাপি শিক্ষার্থীদের মূলত ফাউন্ডেশন কোর্স অফার করছে, যা একজন শিক্ষার্থীকে ইংলিশ ভাষায় একেবারে বেসিক লেভেল থেকে ঘরে বসে প্রিপারেশন নিয়ে যেন IELTS পরীক্ষায় ভালো স্কোর করতে পারে, সেই লেভেলে দক্ষ করে তুলেছে।
তার মানে ইংলিশ থেরাপি এর এই ফাউন্ডেশন কোর্সের মাধ্যমে একজন শিক্ষার্থীকে একই সাথে ইংলিশ ভাষায় পড়তে, লিখতে ও কথা বলতে পারার দক্ষতা অর্জনের জন্য, একেবারে Vocabulary ও গ্রামার থেকে শুরু করে উচ্চারণও শেখানো হয়। যাতে করে স্টুডেন্টরা ইংলিশে কথোপকথন চালানোর দক্ষতা অর্জন করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটিতে সপ্তাহে ছয় দিন সকাল ৭:০০ থেকে রাত ১০:০০ পর্যন্ত একাধারে মোট ছয়টি ইনডোর ও আউটডোর সেশন করা হয়। ফলে পুরো কোর্স শেষে মোট সেশনের সংখ্যা পাঁচশ ছাড়িয়ে যায়। ইংলিশ শেখার বিষয় শুধুমাত্র ক্লাসরুমের মধ্যেই সীমাবদ্ধ না রেখে ক্লাসের বাইরে প্রাকৃতিক পরিবেশে, এমনকি টং এর দোকান পর্যন্ত যেন চর্চা চলে। সেজন্য প্রতিষ্ঠানটি প্রতিনিয়ত টি-পার্টি ও আউটডোর ক্লাসেরও আয়োজন করে। ইংলিশ থেরাপি শিক্ষার্থীদের ইংলিশ চর্চার জন্য সেরা পরিবেশ তৈরি করার ওপর সর্বোচ্চ জোর দেয়।
প্রতিষ্ঠানটির ভাষ্যমতে, তারা দেশের সবচেয়ে আন্তরিক ইন্সট্রাক্টরদের দ্বারা শিক্ষার্থীদের ইংরেজি শেখান। যারা সকাল ৭ থেকে রাত ১০ পর্যন্ত আন্তরিকতার সাথে শিক্ষার্থীদের সকল ধরনের সমস্যা শোনেন এবং সমাধান দিয়ে থাকেন। প্রতিটি ব্যাচেই একজন ফুল টাইম ইনস্ট্রাকটার এর পাশাপাশি একজন সিনিয়র ইনস্ট্রাকটার থাকেন। যাঁরা শিক্ষার্থীদের লেকচার বুঝতে ও চর্চা করতে সহায়তা করে। শিক্ষার্থীরা সারাদিন ক্লাস ও বিভিন্ন সেশন করার পরেও রাতে তাঁদের কোনও কিছুতে কনফিউশন বা সহায়তার প্রয়োজন পড়লে যেন তা ক্লিয়ার করা যায়, সেজন্য প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতি হলে একজন করে ইনস্ট্রাকটার থাকার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য ইংলিশ থেরাপি সকাল ৯ টা থেকে দুপুর ১ টা এবং সন্ধ্যা ৬ টা থেকে রাত ১০ পর্যন্ত প্রতিদিন ৪ ঘণ্টা করে দুইটি ব্যাচে ফাউন্ডেশন কোর্সটি অফার করছে। তবে শিক্ষার্থীরা চাইলে প্রতিষ্ঠানটির স্টাডি রুমে সারাদিনে প্র্যাকটিস করতে পারে এবং যে কোনও সময় প্রতিষ্ঠানটির যে কোনও সেশনে জয়েন করতে পারে। প্রতিটি কোর্সের মেয়াদ তিন মাস হলেও যদি কোনো শিক্ষার্থীর এর চাইতে বেশি সময়ও লাগে তাহলে যত দিন পর্যন্ত প্রয়োজন ততদিন বিনামূল্যে কোর্স কন্টিনিউ করতে পারে।
ইংলিশ শেখার জন্য নিয়মিত চর্চায় জোর দিয়েই ইংলিশ শেখার সবচেয়ে আন্তরিক পরিবেশ দিতে প্রতিষ্ঠানটিতে সাইফুল ইসলামের সরাসরি তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষিত Instructor আছেন। শিক্ষার্থীদের ভর্তি হওয়া থেকে শুরু করে কমপ্লিট লার্নিং এক্সপিরিয়েন্সকে সমৃদ্ধ করার জন্য ইনস্ট্রাকটার থেকে শুরু করে ফিজিকাল ও রিমোট কর্মী মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিতে অর্ধ-শতাধিক কর্মী কাজ করে যাচ্ছে। প্রতিষ্ঠানটির ইউটিউব ও ফেসবুক পেজে থাকা অনলাইন কোর্সের মাধ্যমে দেশের লাখ লাখ শিক্ষার্থী প্রতিনিয়ত উপকৃত হওয়ার পাশাপাশি ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির আবাসিক ক্যাম্পাসে আড়াই হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থীকে প্রাইভেট কেয়ারের মাধ্যমে ইংলিশ ভাষায় দক্ষ করে তুলতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে একটি স্টুডেন্ট কেয়ার ডিপার্টমেন্ট রয়েছে যেটি মূলত স্টুডেন্টদের ক্যারিয়ার অ্যাডভাইস এবং জব প্লেসমেন্ট সহ বিদেশ গমনে ইচ্ছুক স্টুডেন্টদের প্লেসমেন্টের ক্ষেত্রে হেল্প করে থাকে। কোর্স করানোর পাশাপাশি ইংলিশদের প্রতিষ্ঠাতা সাইফুল ইসলাম এ পর্যন্ত তিনটি বই লিখেছেন। ২০২১ সালে ইংলিশে দুর্বলদের জন্য "ইংলিশ থেরাপি" নামে বইটি প্রকাশের পর ব্যাপক সাড়া পেলে ২০২২ সালের বইমেলায় সহজ ভাষায় ইংলিশ গ্রামার বই বাজারে নিয়ে আসেন। দুটি বইই ২০২২ সালে রকমারি বইমেলা Best Sell এর অ্যাওয়ার্ড পায়। বই দুটির সাফল্যের ধারাবাহিকতায় সাইফুল ইসলাম ইলিশের দুর্বলদের জন্য "Vocab Therapy" নামে আরেকটি বই নিয়ে আসেন, যা ২০২৩ সালে রকমারি বইমেলা বেস্ট সেলার অ্যাওয়ার্ড পেতে সক্ষম হয়। ২০২৪ সালে সাইফুল ইসলাম ইংলিশ দুর্বলদের জন্য ইংলিশ থেরাপির দ্বিতীয় অংশ প্রকাশের পরিকল্পনা করছেন।
ইংলিশ শেখার সেরা পরিবেশ দেওয়া এবং সর্বসাধারণের জন্য বই প্রকাশের পাশাপাশি সাইফুল ইসলাম "ল্যাঙ্গুয়েজ ইন্সট্রাক্টর অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ" বা লিয়াবের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশে ভাষা শেখা ইন্ডাস্ট্রির অ্যাডভান্সমেন্টে কাজ করে যাচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠান, প্রকাশিত বই এবং ইউটিউব ও ফেসবুকে অগণিত লেকচার ভিডিওর মাধ্যমে দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষ প্রতিনিয়তই উপকৃত হচ্ছে। যার ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি সাইফুল ইসলামকে জিসিএ বাংলাদেশ টেন আউটস্ট্যান্ডিং ইয়াং পার্সোন হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে।
ভবিষ্যতে আরও বেশি শিক্ষার্থীকে সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে ২০২৪ সালে ঢাকার মিরপুরে আরেকটি ক্যাম্পাস তৈরির পরিকল্পনা করছে। বাংলাদেশের মানুষের ইংলিশে দক্ষতা বাড়ানো ও ওভারওল ক্যারিয়ার প্রগ্রেসের জন্য প্রতিষ্ঠানটির রয়েছে বেশ কিছু সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাও।